গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় মেতেছে মানিকগঞ্জ। দীর্ঘ ১৩ বছরের বিরতির পর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কালীগঙ্গা নদীতে অনুষ্ঠিত হলো এই বর্ণাঢ্য নৌকাবাইচ উৎসব। নদীর দুই পাড় জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছিল মানিকগঞ্জ।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১টায় মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো: মানোয়ার হোসেন মোল্লা,আনুষ্ঠানিকভাবে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী নদীর তীরে উপস্থিত হাজারো দর্শক করতালির মাধ্যমে এই আয়োজনের সূচনাকে স্বাগত জানান।
এই প্রতিযোগিতায় ৬টি জেলা (মানিকগঞ্জ, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ) থেকে মোট ২৯টি দ্রুতগামী ও রঙ্গিন নৌকা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতাটি চার রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি রাউন্ডের বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি করে রেফ্রিজারেটর। আর চূড়ান্ত ফাইনাল রাউন্ডের চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে একটি বাহন চাবি (মোটরসাইকেল)।
নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে গোটা মানিকগঞ্জ জেলা পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। জেলার প্রায় ৭টি উপজেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এই দুষ্প্রাপ্য দৃশ্য দেখতে কালীগঙ্গা নদীর দুই তীরে ভিড় জমান। দর্শনার্থীরা আসন দখল করে থেকে নৌকা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষও এই উৎসবে শামিল হয়ে বাংলার প্রাণের উৎসবে মাতেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আফরোজা খান রিতা এবং মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা: ইয়াসমিন খাতুন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ মাহবুব অর্থপ্রশাসন,মানিকগঞ্জ। উপস্থিত ছিলেন জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জেলা প্রশাসক ড. মো: মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “গ্রামবাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং জনগণের মধ্যে উৎসবের আমেজ পৌঁছে দিতে আমরা এই আয়োজন করেছি। দর্শকদের বিপুল উপস্থিতিএই সিদ্ধান। আগামীতেও আমরা এমন সাংস্কৃতিক আয়োজন অব্যাহত রাখব।”
পুলিশ সুপার মোছা: ইয়াসমিন খাতুন বলেন, “অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।”
এই নৌকাবাইচ শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রদর্শনী। মাঝিরাদের সদাঁড় টানার দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং নদীতে পানির ছিটেঁ জীবন হয়ে উঠেছিল এক অপরূপ দৃশ্য। দীর্ঘ বিরতি পুরনো সেই আমেজ ফিরে পেতে পেরে স্থানীয় উদ্দীপনা।
এই আয়োজনের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বাংলার প্রাচীন ফিরে পেয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।