বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অযাচিত তর্ক-বিতর্ক করে দেশের স্বার্থ থেকে যেন দূরে সরে না যাই। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ‘ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অযাচিত তর্ক-বিতর্ক দেশবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেবে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবে না, সামনে এগোতে হবে- উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে, আলোচনা হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রাজনৈতিক বিতর্কের সুযোগে কেউ যেন দেশ ধ্বংস করতে না পারে। তর্ক-বিতর্কের ফাঁকে দেশে যেনো এমন পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, যাতে স্বৈরাচার বা দেশবিরোধী শক্তি সুযোগ পেয়ে যায়। সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলে বিএনপিই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। তবে, এই আশা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। দলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে তৈরি হতে হবে। আমাদের কথাবার্তা ও কাজকর্ম সবকিছুতেই এর প্রতিফলন থাকতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ আমাদেরকে আবারও সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি। রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা রূপরেখা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পসহ সব সেক্টরের উন্নয়নেই বিএনপি কাজ করবে।
যুক্তরাজ্যে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের-উদাহরণ তিনি বলেন, তবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে তাদের ৭৭ বছর লেগেছে। জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আমরাও সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।
তারেক রহমান বলেন, বহু বছর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছিলেন, তা হলো- স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। আজ তাঁর কথা সত্যি হয়েছে। স্বৈরাচার লুটপাট করে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন দেশটাকে এই ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলতে হবে।
দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মূল যে কাজ অর্থাৎ দেশের মানুষের যে বিবিধ সমস্যা, তার সমাধান হবে না।
নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারেক রহমান বলেন, দলে যত বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করা হবে, ততো বেশী ভাল মানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একইভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হলে দেশ ভাল নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, পর্যায়ক্রমে আমরা সে সকল মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হবো, যাদেরকে এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী প্রত্যাশা করেন। এই দেশ যে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে, তাদেরকেই সামনে আনতে হবে। তাই যেকোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তবে যে সর্বনাশের খাদের কিনারায় দেশটা চলে গেছে, সেখান থেকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনাতে। অনেক বছর পরে আবারও খুলনায় বিএনপির কাউন্সিলে থাকতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারেক রহমান।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কেএম হুমায়ুন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল, কাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ।