মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের ইয়ারপুর গ্রামে পুকুর সংস্কারের নামে এলজিইডির নতুন পাকা সড়ক ঘেঁষে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে। মাটি পরিবহনের সময় ব্যবহৃত দানব আকৃতির হাইড্রোলিক ট্রাকের চাপে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং আশপাশের বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমিতে ধুলাবালির দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই মাটি কাটার নামে এলাকায় চলছে অবৈধ ব্যবসা। অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলে রাস্তার স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে ফসল ও বসতবাড়ির পরিবেশ। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রাথমিকভাবে নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে অভিযোগ।
অভিযুক্ত মো. লুৎফর রহমান দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ডের সহসভাপতি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করে আসছেন। এমনকি, পুকুর সংস্কারের নামে ইউএনও বরাবর একটি আবেদনের পর কলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে মাটি স্থানান্তরের কাজ চলছে বলে দাবি করেছেন তিনি ও তার পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দার বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
স্থানীয় রাজনীতিতে এই মাটি বাণিজ্য ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট বুলবুল আহমেদ গোলাপ জানান, “বিএনপির কিছু সুবিধাভোগী নেতা স্বার্থান্বেষী হয়ে আওয়ামী লীগপন্থীদের সঙ্গে মিশে এসব কাজ করছে। জেলা বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”
তবে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সরকারি অনুমতি থাকলে পুকুর খনন দোষের কিছু নয়। তবে মাটি বিক্রি হলে সেটি অবৈধ। লুৎফর রহমান আগে আওয়ামী লীগ করতেন, সেটিও সত্য।”
অভিযুক্তের বক্তব্য লুৎফর রহমান ও তার ছেলে মো. রফিক হোসেন, যিনি একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিকদের সামনে মাটি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তারা দাবি করেন, স্থানীয় কিছু লোক মাটি ব্যবসায় অংশ নিতে না পেরে তাদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং হুমকি দেয়। এজন্যই থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রশাসনের অবস্থান দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন বলেন, “জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিয়ান নুরেন বলেন, “পুকুর সংস্কারের অনুমতি থাকলেও মাটি কেটে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।