রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ফরিদা পারভীনের শেষ শ্রদ্ধা শহীদ মিনারে, দাফন কুষ্টিয়ায় কেমিক্যালমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে ব্র্যাক মানিকগঞ্জ জেলার প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠিত। মানিকগঞ্জে সেনা অভিযানে অস্ত্র, ইয়াবা সহ গ্রেপ্তার “পিস্তল ফারুক” বিএনপির সদস্য সংগ্রহে আতাউর রহমান আতার সভা, স্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণে উদ্দীপনা। দীর্ঘ ১৩ বছর পর কালীগঙ্গায় মাতালেন নৌকার মাঝিরা, লক্ষ দর্শকের উপচেপড়া ভিড়। মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানায় পুলিশের হেফাজতে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর রান্না করা খাবার। আতাউর রহমান আতার নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে বেগম খালেদা জিয়ার ৮০ তম জন্মদিন ও দীর্ঘায়ু কামনায় মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত। বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি নিয়ে সাটুরিয়ায় গঠনমূলক আলোচনা। প্রয়াত মহাসচিব,মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্মরণে স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত। বিআরটিএ ডিজিটাল সেবা ও সড়ক দুর্ঘটনা ভুক্তভোগীদের সহায়তায় মানিকগঞ্জে কার্যকর উদ্যোগ।

গ্রীষ্মের রুদ্ররূপেও বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি

এমসি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
  • ৬৮ বার পঠিত

বাংলার প্রকৃতিতে প্রথমে যে ঋতুর আগমন ঘটে তা হলো গ্রীষ্ম। বাংলার প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ জুড়ে গ্রীষ্মকালের শাসন চলে। এই সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জমিন। খাল-বিল পুকুর থেকে শুরু করে অনেক নদীর পানিও যায় শুকিয়ে। পানিশূন্যতায় জমিনে ফাটল ধরে। কৃষি চাষে যেমন বিঘ্ন ঘটায় ফলফলাদিতেও পানিশূন্যতা ক্ষতি বয়ে আনে। প্রকৃতির এমন রুদ্ররূপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে মানুষ থেকে পশুপাখিরা। শুষ্ক জামিনও এক পশলা বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়।
গ্রীষ্মের তপ্ততা কবি-সাহিত্যিদেরকেও ভীষণভাবে গ্রাস করেছে। তারা গ্রীষ্মের বৈচিত্র্যময় রূপে বিমোহিত হয়ে বিভিন্ন রূপে গ্রীষ্মকে উপস্থাপন করলেও ফজলুর রহমান তো গ্রীষ্মের রূপটাই উঠিয়ে আনলেন,
ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে
খাল বিল চৌচির, জল নেই পুকুরে।
মাঠে ঘাটে লোক নেই, খাঁ খাঁ করে রোদ্দুর।পিপাসায় পথিকের ছাতি কাঁপে দুদ্দুর।
রোদ যেন নয়, শুধু গনগনে ফুলকি।
আগুনের ঘোড়া যেন ছুটে চলে দুলকি।
বৈশাখের শুরুতে গ্রীষ্মের দাবদাহে দগ্ধ করলেও শেষে ও জৈষ্ঠ্যমাসের শুরুতেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা বেশ পরিলক্ষিত হয়। তখন হাহাকার করা প্রকৃতিতে চলে বৃষ্টির বন্দনা। স্বস্তিতে ফিরে জনজীবন, পাখপাখালি। পানিশূন্য জমিনও উজ্জীবিত হয়ে উঠে। সজীবতা ফিরে পায় ফসলি জমিন।
কখনো ঝিরিঝিরি থেকে শুরু করে ধেয়ে আসে কখনো কালবৈশাখী ঝড়। কখনো আবার বিদ্যুৎ চমকিয়ে বজ্রপাতে কৃষকের পিলে দেয় কাঁপিয়ে। নগর জীবনে এক পশলা বৃষ্টিতেও ছাদে ছাদে চলে বৃষ্টিবিলাসের মহাউৎসব। কৃষকের ধান মহান রবের কুদরতি বৃষ্টির কণার ছোঁয়ায় সোনালি রঙে রাঙে। গ্রীষ্মে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে পাকা ধান ঘরে তুলতে। গোলা ভরেন সোনালি ধানে।
সুকুমার রায়-ও গ্রীষ্মের বৈশাখে প্রেমে মেতেছেনথ
ঐ এল বৈশাখ, ঐ নামে গ্রীষ্ম,
খাইখাই রবে যেন ভয়ে কাঁপে বিশ্ব !
চোখে যেন দেখি তার ধুলিময় অঙ্গ,
বিকট কুটিলজটে ভ্রুকুটির ভঙ্গ,
রোদে রাঙা দুই আঁখি শুকায়েছে কোটরে,
ক্ষুধার আগুন যেন জ্বলে তার জঠরে !
রসালো ফল হলো গ্রীষ্ম ঋতুর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। গ্রীষ্মকাল আমাদের যতই গরমে অতিষ্ঠ করুক, যদি গ্রীষ্মকাল না থাকত তাহলে আমরা এত এত ফুল আর ফলের ঝাঁপি কোথায় পেতাম!
গ্রীষ্মকাল মানেই চারপাশে মিষ্টি ফলের সুঘ্রাণের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্ম মানেই সবার কাছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের সেই টসটসে রসালো ফলের সমাহার। অনেকের কাছে গ্রীষ্ম মানেই শুধু আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ আর আনারসের সেই মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ। গ্রীষ্মের ফল খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেননি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাঙ্গি আর তরমুজ তো তৃষ্ণার্থ প্রাণে এক টুকরো শীতলতার পরশ। কাঁচাপাকা আম আর টকটকে লাল লিচুর স্বাদ শুধু গ্রীষ্মতেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া আতা, গাব, বেল, জামরুল, আমলকী, কলা, নারিকেল, পেয়ারা, পেঁপে, সফেদা, তালশাঁস, লেবু, কামরাঙা, কাজুবাদাম, গোলাপজাম, ড্রাগন ফল, ডেউয়া, তৈকর, প্যাশন ফল, চুকুর, লুকলুকি, বেতফল, আঁশফল, ফলসা, হামজাম, বৈঁচি, মুড়মুড়ি, খেজুর ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন ফল তো রয়েছেই।
গ্রীষ্মের রোদ্দুরে প্রকৃতিপ্রেমীরা হরেক রকমের পুষ্পের বন্দনায় মেতে ওঠে। সবুজের নান্দনিকতার মাঝে শুভ্র, লাল, হলুদের পসরা বসে। হরেক রকমের নজরকাড়া ও মনজুড়ানো ফুল ফোটে এ সময়। লাল ও হলুদ রঙের কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয় হলুদ সোনালু, বেগুনি জারুল। এ ছাড়াও কনকচূড়া, গন্ধরাজ, লালসোনাইল, কুরচি, মেঘশিরীষ, ঝুমকোলতা, হিজল, স্বর্ণচাপা, উদয়পদ্ম, গুলাচি, নাগেশ্বর, গুস্তাভিয়া, মধুমঞ্জুরি, রক্তিম গুলবাহার, ডুলিচাপা, বরুণ, কাঠগোলাপসহ বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্য গ্রীষ্মই উপভোগ্য। বর্ষার ফুল যেমন কদম, তেমনি গ্রীষ্মের মূল আকর্ষণও কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মে লাল কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু ফুলে বিমোহিত হওয়া ছাড়া উপায় কোথায়! যদিও কৃষ্ণচূড়া বসন্তের ফুল। বসন্তে গজায় সবুজ সতেজ শাখাগুলো। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় পুরো গাছ। কোকিলের কোলাহল উঠে ওই বসন্তেই। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার মূল রূপ, সৌন্দর্য ফুটে উঠে গ্রীষ্মেই। তাই তো
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণচূড়ার প্রশস্তি করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সোনালু ফুলের প্রেমে পড়েছিলেন। পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়ে সোনালু ফুলের রেশ থাকে। প্রকৃতির এমন সতেজ ও সাজানো রূপ দেখে গ্রীষ্মের তপ্ততা ভুলে থাকে সবাই! যেভাবেই হোক এমনকি অযত্নে-অবহেলায় হলেও গ্রীষ্মের ফুলের রূপ তার সৌন্দর্য জানান দেবেই। গ্রীষ্মের ফুল শুধু সৌন্দর্য বিলায় না আছে বেশ ঔষধি গুণও।
গ্রীষ্মের এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে দিজেন্দ্রলাল রায়ের কথাই মনে ওঠে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Registration number-p-35768