১৯৭৭ সালের ১০ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২২ জন ছাত্রীকে নিয়ে ঢাকায় প্রথম মেয়েদের ফুটবলের অনুশীলন শুরু করেছিলেন সাহেব আলী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, এই মেয়েদের মধ্যেই ভবিষ্যতের ফুটবলার আছে। ৭-৮ জন অনেক দূর যেতে পারে। কিন্তু অর্থাভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ নীরবতা।
২০০৩ সালে ফিফা ও এএফসির চাপ না থাকলে হয়তো সেই নীরবতা আজও থাকত। বাধ্য হয়েই বাফুফে আবার চালু করে নারী ফুটবল। মাঠে এসে তখন ম্যাচ পণ্ড করে দেয় একশ্রেণির মানুষ। বাফুফে পিছিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল চালু না রাখলে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ফিফা। সেই হুমকিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু বাংলাদেশ নারী দলের। প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলে হার। তবে সেই হতাশা বেশি দিন থাকেনি। পরের ম্যাচে ৩১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসে প্রথম জয়।
সেই শুরু থেকে আজ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দল খেলেছে ফিফাুস্বীকৃত টায়ার-১ শ্রেণির ৬৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে জয় ২৭টি, হার ৩১টি, ড্র ১১টি। ১৫ বছরের এই পথচলায় সবচেয়ে উজ্জ্বল অর্জন—প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া।
২০২২ সালে কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ জেতে প্রথম সাফ ট্রফি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০২৪ সালে আবারও জেতে সাফ শিরোপা। এর মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়েছে। সাফ অঞ্চলের বাইরেও সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়ার মতো দলকে বড় ব্যবধানে হারানোর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
ঋতুপর্ণার অসাধারণ দুই গোলে বাংলাদেশের মিয়ানমার-জয় সেটিকে পুঁজি করে মিয়ানমারে চলমান ২০২৬ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপের খেলায় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক মিয়ানমার ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। সেই বাধা কল্পনারও বাইরে গিয়ে জয় করেছে। ২-১ গোলের জয়ে নিশ্চিত হয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের জায়গা পাওয়া।
২০০৭ সালে ‘ভিশন এশিয়া’ প্রকল্পের অধীনে প্রথম মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাফুফে। ২০০৯ সালে শুরু হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর গোলাম রব্বানীকে নারী দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর হাত ধরেই শুরু নতুন যাত্রা। যদিও বাফুফে ভবনে দীর্ঘমেয়াদি আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভঙ্গুর কাঠামোর মধ্যে শুধু ক্যাম্প করে আর কত দূর যাওয়া যাবে? মেয়েদের অদম্য ইচ্ছার জোরে কত দূর যাওয়া যায়, তা তো আজ প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের নারীরা ক্রিকেটে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়েছে। এবার ফুটবলেও তারা প্রমাণ করেছে সুযোগ পেলে তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারে। আমরা কি আমাদের অপ্রতিরোধ্য কন্যাদের জন্য বুকভরা ভালোবাসা জানাব না?